হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ বিনা বিচারে ৫ বছর যাবত দুবাই কারাগারে থাকা স্বামীর মুক্তি চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন হবিগঞ্জের এক গৃহবধু। রবিবার (৬ আগষ্ট) বিকালে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি করেন রুমা আক্তার নামের এক গৃহবধু।
এ সময় তিনি বলেন, ৮ বছর আগে তার স্বামী ফয়সল মিয়া দুবাই যান। দেশে রেখে যান স্ত্রীসহ খাদিজা আক্তার প্রিয়া নামের ১ কন্যা ও তাজুল ইসলাম রাব্বী নামের ১ পুত্র সন্তানকে।
পুত্র সন্তান যখন গর্ভে তখনই ফয়ছল বিদেশে পাড়ি জমান। এখন পর্যন্ত তার স্বামী ফয়ছল পুত্র সন্তানের মুখ দেখেননি। তার পুত্রও এখন পর্যন্ত তার জন্মদাতা পিতার মুখ দেখেনি। সেই সন্তানের বয়স এখন ৮ বছর।
বিদেশে যাওয়ার পর গত ২০১৩ সালে সেখানে একটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। হত্যাকান্ডের শিকার হন বাংলাদেশী নাগরিক শফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার ধুলিয়াকান্দি সরিষাবাড়ি গ্রামে।
হত্যাকান্ডের পর থেকেই প্রধান অভিযুক্ত বাচ্চু মিয়া দুবাই থেকে পালিয়ে আসে। তার বাড়ি মাধবপুর বলে তিনি জানান।
হত্যাকান্ডের পর সন্দেহবশতভাবে আমার স্বামী ফয়সল মিয়া ও নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার সাতাশি গ্রামের এরশাদ মিয়াকে ডেকে নিয়ে দুবাই পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর থেকে তারা দুজনই গত ৫ বছর ধরে দুবাইর জেলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন তার স্বামী সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই) দেশে একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসির মুখোমুখি অবস্থায় দিন যাপন করছেন।
উলে¬খ্য গ্রেফতারকৃত নেত্রকোনার ইরশাদ মিয়া নিহত শফিকুল ইসলামের শ্যালক। তারা সবাই একই ম্যাসে থাকতেন। সেই সুবাধে এরশাদ ও নিহত শফিকুল ইসলামের সাথে তার স্বামীর পরিচয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, খুব সংক্ষিপ্তভাবে সেখানে বিচারের আয়োজন করা হয় এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষী প্রমাণ ব্যতিরেখেই হত্যাকান্ডের মামলাগুলোতে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়।
সাংবাদিকদের মাধ্যমে রুমা বলেন, আমি জানিনা নিহত শফিকুল ইসলামের সাথে শ্যালক এরশাদ মিয়ার কোনো পারিবারিক বিরোধ ছিল কি না। যদি থেকেও থাকে তাহলেও তো আমার স্বামীর সাথে বিরোধ থাকার কথা না। বিদেশের মাটিতে একটি হত্যাকান্ডের সাথে আমার স্বামী কোনোভাবেই সম্পৃক্ত থাকার যুক্তিসংগত কোনো কারণ থাকতে পারেনা। তথাপি আমার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়। এখন আমার স্বামী দুবাই দেশে ফাসির অপেক্ষমান হিসাবে নিদারুন মানবেতরভাবে প্রতিটি মুহুর্ত অতিবাহিত করছেন।
তিনি বলেন, তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি মারা গিয়েছেন। স্বামীর অবর্তমানে দুই সন্তান নিয়ে তিনি মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
প্রকাশ দুবাইয়ে একটি ফাসি কার্যকরের আগে ব্লাড মানি বা রক্তঋন পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে দুবাই সরকার বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিভিন্নভাবে নিহত শফিকুল ইসলামের পরিবারকে দুবাইর আদালতে গিয়ে ব¬াড মানি বা রক্তঋণ দাবী এবং নিহত শফিকুল ইসলাম যে তাদের পরিবারের সদস্য তা নিশ্চিত করার জন্য পত্র দিয়ে আসছে।
এসব পত্র বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে নিহত শফিকুল ইসলামের পরিবারকেও জানানো হচ্ছে। কিন্তু শফিকুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো রকম সাড়া দেয়া হচ্ছে না। তাতে রুমা আক্তার বারবার হতাশ হচ্ছেন। তার আশংকা যে কোনো দিন বিনা বিচারে ফাসি দেয়া হতে পারে তার স্বামীকে। এহেন অবস্থায় তিনি তার স্বামীর মুক্তির ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।