এম এ আই সজিব, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে বিচারকের চিকিৎসা নিয়ে জটিলতার ফলে সৃষ্ট কর্মবিরতিতে চিকিৎসা না পেয়ে শিশুসহ ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরুজা পারভীনের চিকিৎসায় অবহেলা ও জজশীপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর হামলার ঘটনায় হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ গোলাম মঈন উদ্দিন সাকোকে প্রধান আসামী করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার উল্লেখ্যযোগ্য আসামীরা হলেন ঃ ব্রাদার হাবিবুর রহমান, আব্দুল আওয়াল, মোশারফ, নজরুল ইসলাম, এমএলএসএস ছোটন মিয়া, মোঃ বাচ্চু মিয়া, জাহিদ মিয়া, ওয়াহেদ মিয়া, ইছহাক মিয়া, জসিম মিয়া প্রমুখ।
মঙ্গলবার বিকেলে জজ কোর্টের নাজির ওসমান রেজাউল করিম বাদি হয়ে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এসএম হুমায়ূন কবিরের আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বাদিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট হাবিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবি। বিচারক শুনানী শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।
এর আগে গত সোমবার রাতে হাসপাতালে দুই ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকে। এ সময় কাঙ্গিত সেবা না পেয়ে হাসপাতালে আগত রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। পরে সিভিল সার্জনের নির্দেশে রাত ১২টার পর হাসপাতালের পরিবেশ স্বাভাবিক হলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও বিক্ষোভ করতে জড়ো হন হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং বেলা ১২ টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন তারা। ফলে গতকালও দুর্ভোগে পড়েন হাসপাতালে আগত রোগী ও দর্শনার্থীরা। এ কর্মবিরতির ফলে লাখাই উপজেলার সিংহগ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের পুত্র আব্দুল মোতালিবকে (৬৫) শ্বাসজনিত রোগের কারণে দুপুরে হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্মবিরতির অজুহাতে কোন ডাক্তার চিকিৎসা না করায় অক্সিজেনের অভাবে বিকালে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
অপরদিকে একই সময় সদর উপজেলার কাশিপুর-চাঁনপুর গ্রামের লাকি আক্তার (৩) নামের এক শিশু পানিতে ডুবে গেলে তার স্বজনরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। একই কারণে তারও মৃত্যু হয়।
তাদের স্বজনরা জানান, শুনেছি ডাক্তারদের সাথে কোন বিচারকের বিরোধ হয়েছে। ডাক্তার-কর্মচারিরা এ অযুহাতে কর্মবিরতি পালন করছে। আমাদের কি দোষ? শুধু মোতালিব কিংবা লাকি আক্তারের পরিবারই নয়, গতকাল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শত-শত রোগী চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে গেছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, গত সোমবার রাত প্রায় সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীন। খবর পেয়ে জজ কোর্টের নাজির ওসমান রেজাউল করিম হাসপাতালে গিয়ে একজন চিকিৎসককে অসুস্থ বিচারকের বাসায় নিয়ে আসেন। ওই চিকিৎসকের পরামর্শে রাতেই অসুস্থ বিচারককে সদর আধুনিক হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় জরুরী বিভাগে কর্মরত ব্রাদার হাবিবুর রহমান প্রথমে স্লিপ আনতে বলেন। এক পর্যায়ে বিচারককে মহিলা ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য চিকিৎসক বলেন। তখন উপস্থিত বিচারকবৃন্দ এবং নাজির একটি কক্ষ দেয়ার জন্য অনুরোধ করনে।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উপস্থিত লোকজন ব্রাদার হাবিবকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাতে সিভিল সার্জনসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে ব্রাদার হাবিবকে ছাড়িয়ে আনা হয়। পরে বিচারক মাফরোজা পারভীনকে ওভজারভেশন রুমে নিয়ে রাখা হয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ নজিবুস শহীদ অভিযোগ করেন, সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরুজা পারভীন। হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন কোন কক্ষ না থাকায় তাকে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কক্ষ গুছিয়ে দিতে বিলম্ব হওয়ায় জেলা জজ আদালতের নাজির ওসমান রেজাউল করিম কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মঈনের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। বিচারক মাফরোজা পারভীনকে নির্ধারিত কক্ষে নেয়ার পর তার দেহরক্ষী পুলিশ কনস্টেবল নূরে আলম রনি কক্ষ দিতে বিলম্ব হওয়ায় উত্তেজিত হয়ে জরুরি বিভাগে কর্মরত ব্রাদার হাবিবুর রহমানকে জোরপূর্বক সদর মডেল থানায় নিয়ে যান। অবশ্য রাতেই পুলিশ হাবিবুর রহমানকে ছেড়ে দেয়। এ অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা রাতে হাসপাতালের সভাকক্ষে জরুরি বৈঠকে বসেন। তারা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। রাত সাড়ে ১০টায় চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সভায় উপস্থিত হন সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মনির এবং সদও থানার ওসি মোঃ নাজিম উদ্দিনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ। তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা আজ বুধবার পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেন।
বৈঠকে সিভিল সার্জন ডাঃ দেবপদ রায়, হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ অরুণ কুমার পালসহ সব চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ অংশ নেন। খবর পেয়ে সভায় উপস্থিত হন সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মনির ও হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন।
এ সময় ব্রাদার হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ কনস্টেবল নূরে আলম রনি ও নাজির রেজাউল করিম তাঁকে অহেতুক লাঞ্ছিত করেছেন। এতে তাঁর বিন্দুমাত্র দোষ ছিল না। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের স্টাফদের ইনচার্জ মোশারফ হোসেন আখনজী বলেন, অবিলম্বে এ ঘটনার বিচার না হলে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখবেন তাঁরা। ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ অরুণ কুমার রায় বলেন, ‘অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরুজা পারভীন অসুস্থ। এ সংবাদ আমাদের জানালে আমরা তাৎক্ষণিক হাসপাতাল থেকে দুইজন চিকিৎসক পাঠাই। তাঁরা গিয়ে মাফরুজা পারভীনের চিকিৎসা করে আসেন। হাসপাতালের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ত্র“টি ছিল না। তার পরও হাসপাতালের চিকিৎসক ও ব্রাদারকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডাঃ দেবপদ রায় বলেন, ‘আমার চিকিৎসক ও স্টাফরা জরুরি বিভাগে কাজ করতে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘ আলোচনার পর সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মনির পুলিশ কনস্টেবল নূরে আলম রনির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। সভাশেষে সিভিল সার্জন ডা. দেবপদ রায় হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম পরবর্তী কর্মসূচি না ঘোষণা হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিলে কাজে ফিরে যান চিকিৎসক ও কর্মীরা।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো: আব্দুর রকিব
সম্পাদক ও প্রকাশক: সাখাওয়াত হোসেন টিটু
সহযোগী সম্পাদক : তোফাজ্জল হোসেন অপু, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : গাজীউর রহমান ইমরান
বার্তা সম্পাদক : কামরুজজামান আল রিয়াদ, নির্বাহী সম্পাদক : মো: জালাল উদ্দিন রুমী।
অফিস-১ : উদয়ন আবাসিক এলাকা শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ।
আঞ্চলিক অফিস : নূরপুর হাইস্কুল রোড, শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ।
নিউজ প্রেরনের জন্য e-mail : shaistaganjnews@gmail.com
Web site- www.shaistaganj.com
মোবাইল নাম্বার- ০১৭৪০৯৪৩০৮২ (সম্পাদক ও প্রকাশক)
মোবাইল নাম্বার- ০১৭১৬৪৩৯৬২৫ (বার্তা সম্পাদক )
© All rights reserved © 2023 shaistaganj