চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকের উপর হামলা ও লাঞ্চিত করেছেন জমিদাতা সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় চুনারুঘাট সদর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ নিয়ে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌর মেয়র, অফিসার ইনচার্জ ঘটঁনাস্থলে ছুটে আসেন। পরে অবশ্য বিষয়টি সমাধান শেষে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু হয়।
এদিকে শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষক লাঞ্চিত হওয়ার খবর পেয়ে উপজেলার সকল শিক্ষকগণ পরীক্ষা ফেলে জড়ো হন সদর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পরে শিক্ষকরা এর বিচার দাবী করেন এবং শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, চুনারুঘাট সদর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির জন্য ৭৬ শতক জমি দান করেন চন্দনা গ্রামের মৃত মুছিম উল্লাহর পিতা হাজী আলীম উল্লাহ। বিদ্যালয়ের দক্ষিন দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মান নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরোধ চলে আসছিল। জমিদাতার উত্তরাধিকারী সোহেল মিয়া ও জুয়েল মিয়া গং বুধবার বিদ্যালয়ের দক্ষিন দিকে স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধাঁ দেয়।
এনিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে বিদ্যালয়ের দক্ষিন দিকে বাউন্ডারী নির্মান করার সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দক্ষিন দিকে বাউন্ডারী নির্মান করতে গেলে জমি দাতার ছেলে ও বর্তমান দাতা সদস্য জুয়েল মিয়া গংরা বাধাঁ দেন। এ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও জমিদাতার উত্তরাধিকারীগনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান মোহাম্মদ জোনায়েদ ও ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমিনুল হকের উপর হামলা চালায়। এসময় বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও পথচারীরা শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে উপজেলা কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে ঘঁনাস্থলে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজাম মুনিরা, পৌর মেয়র নাজিম উদ্দিন ও অফিসার ইনচার্জ কে এম আজমিরুজ্জামানসহ একদল পুলিশ। তাৎক্ষনিক তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেন এবং বিদ্যালয়ের প্রাচীর নির্মানের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলে মতামত দেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সকলকে নিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মানের সীমানা ঠিক করে দেন। এ সিদ্ধান্ত উভয় পক্ষ মেনে নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এরই মধ্যে শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করার ঘটনা উপজেলার সকল শিক্ষকদের মধ্যে জানাজানি হলে তারা বিক্ষোদ্ধ হয়ে উঠে। উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে চলমান পরীক্ষা তড়িগড়ি করে শেষ করে সকল শিক্ষকরা চলে আসেন উপজেলা সদরে। তারা তাৎক্ষনিক এ হামলার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক বিচার দাবী করে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজাম মুনিরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যব্যস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলে তারা নিজ নিজ বিদ্যালয়ে ফিরে যায়। শিক্ষকদের মারপিটের ঘনটায় উপজেলা প্রাধমিক শিক্ষক সমিতিসহ সকল শিক্ষকরা তীব্র ন্দিা ও প্রতিবাদ জানান।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান মোহাম্মদ জুনায়েদ বলেন, বিদ্যালয়ের দান করা ৭৬ শতক ভূমির মধ্যে ০২ শতক ভূমি জমি দাতা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আমি এটা নিয়ম বর্হিভূত বললে উত্তেজিত হয়ে তারা আমিসহ আমার সহকারী শিক্ষা অফিসারদের উপর হামলা ও লাঞ্চিত করে। এ বিষয়ে জমি দাতা ও দাতা সদস্য জুয়েল মিয়ার সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, আমি শিক্ষা কর্মকর্তাকে মারতে যাব কেন? তিনি আমাদের সাথে কোন আলোচনা না করে বাউন্ডারী নির্মান করতে গেলে আমরা বাধাঁ দেই।
শিক্ষা অফিসারদের উরপ হামলা ও শিক্ষক লাঞ্জিতের ঘটনায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।