সৈয়দ সালিক আহমেদ :
দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে কি করবেন তা তিনি স্থির করতে পারছিলেন না। নিজের কষ্টে অর্জিত টাকা দিয়ে কিছু একটা করার তাড়নায় তিনি কাছের দুরের বিভিন্ন মানুষের কাছে পরামর্শ চান। অবশেষে তিনি প্রবাসে থাকা কালীন রাজশাহী জেলার তার পরিচিত এক বন্ধুর প্রেরণায় ২বছর আগে পতিত জমিতে হলুদ সবুজ আর লালচে বর্ণের ভিন্ন স্বাদের বড়ই চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের মেহেরগাও গ্রামের বাচ্চু মিয়া।
নিজের উদ্যোগ আর কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি ২লক্ষ টাকা খরচ করে এই বড়ই বাগান শুরু করেন। ৭বিঘা জমিতে বাগান শুরুর পর থেকে আর পিছনে থাকাতে হয়নি বাচ্চু মিয়ার। নেটে মোড়ানো বিশাল এই কাশ্মীরি আপেল কুল জাতের বাগান থেকে তিনি এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৬লক্ষ টাকার কুল বিক্রি করেছেন।
বাচ্চু মিয়ার সফলতা দেখে চৌমুহনী ইউনিয়নের একাধিক মানুষ এখন কুল চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মেহেরগাও গ্রামে যাওয়ার পথে একাধিক জমিতে চোখে পড়ে বিভিন্ন জাতের ছোট বড় কুল বাগান। স্থানীয় বাসিন্দা সুহেল আহমদ জানান, আমাদের ইউনিয়নের মাঠি কুল চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। প্রায় প্রতিটি গ্রামেই ছোট বড় কুল বাগান গড়ে উঠতেছে।
এদিকে মালঞ্চপুর গ্রামের আব্দুন নুর ৫বিঘা উচু পতিত জমিতে চাষ করেন বলসুন্দরী আপেল কুল জাতের ৭০০টি গাছ। প্রথম বছরেই তিনি ৬০ হাজার টাকার কুল বিক্রি করেন। ২য় বছর থেখে বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রতিটি গাছের উচ্চতা প্রায় ৩থেকে ৪ফুট। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে পাতায় পাতায় ঝুলে আছে বাহারী কুল। প্রতিটি কুল অত্যান্ত সুস্বাদু। স্বামী স্ত্রী মিলে প্রতিদিন সকালে এসে কুল পাড়া থেকে শুরু করে গাছের পরিচর্যার কাজ করেন। পাইকারী বিক্রেতারা বাগান থেকে ১০০টাকা ধরে প্রতি কেজি কুল কিনে নেন। তাছাড়া প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি কুল খুচরা বিক্রি করেন আব্দুন নুর দম্পতি।
আব্দুন নুর মিয়ার স্ত্রী জাহেদা খাতুন দৈনিক শায়েস্তাগঞ্জকে বলেন, আমাদের এই জায়গাটি দীর্ঘদিন থেকে পরিত্যাক্ত ছিল, আমার স্বামী তার পরিচতি একজনের পরামর্শে কুল গাছ রোপন করেন। আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে বাগানে এসে ১০/১২ কেজি কুল তুলে বিক্রি করি। তারপর বিকালে এসে আবার ১০/১২কেজি বিক্রি করি। গড়ে প্রতিদিন দিন আমি নিজে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকার কুল বিক্রি করি। আমার পরিবারে ছেলে মেয়েসহ ৮জন। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো আমার স্বামীকে। এখন আমাদের উর্পজনের বড় একটা উপায় হলো এই কুল বাগান। বছরে খরচ হয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। কুল বিক্রি হয় প্রায় আড়াই থেকে ৩লক্ষ টাকার।
এছাড়াও কুল চাষের জন্য এখানকার মাটি উপযোগী হওয়ায় কুল চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষীদের।
কুল চাষে ভালো সফলতা পাওয়ায় বেকার শিক্ষিত যুবকরা কুল চাষের দিকে ঝুঁকছে। এ কুল চাষের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, এই ইউনিয়নের মাঠি কুল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সঠিক পরিচর্যা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী চাষ করলে প্রচুর অর্থ আয় করতে পারবে এলাকার মানুষ। আমরা ব্যাক্তি পর্যায়ে এই এলাকার মানুষকে কম খরচে অধিক লাভজনক এই কুল চাষের জন্য উদ্ধুদ্ধ করছি।