চুনারুঘাট প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজে শালিশি বৈঠকের পরিবর্তে অভিবাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৯ আগষ্ট বেলা ১০ ঘটিকা হইতে দুপুর ১ ঘটিকা পর্যন্ত এ সমাবেশ চলে।
জানা যায়, গত ২৮ জুলাই উপজেলার আসামপাড়া বাজারে ১নং গাজীপুর ইউপির ওয়ার্ড মেম্বার আবুল হাশিমের সঙ্গে অতিরিক্ত ফি আদায় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয় গাজীপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজের নির্বাচিত অভিবাবক প্রতিনিধি বাবুল মিয়ার।
পরদিন আবুল হাশিম গাজীপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকদের জানান বাবুল মিয়া শিক্ষক মন্ডলীকে চোর বলে গালী দিয়েছেন এতে শিক্ষকরা বাবুল মিয়ার উপর মারাত্বক ভাবে ক্ষিপ্ত হন। সঙ্গে সঙ্গেই তারা তিন দিনের কর্ম বিরতির ঘোষনা দেন।
সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী আসামপাড়া বাজারে বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে মিছিল বের করে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন ভাবে প্রতিবেদন ছাপা হয়।
এ ব্যাপারে গভার্নিং বডির সদস্য নজরুল ইসলাম, জালাল খাঁন ও অভিযুক্ত বাবুল মিয়ার সাথে যোগায়োগ করা হলে তারা জানান, স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রফিক আলী ৮ম ও ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করার প্রতিবাদ করায় তারা এমন মিথ্যা অভিযোগ এনে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন।
পিতার বিরুদ্ধে পুত্রের হাতে লাঠি তুলে দেওয়ার মত নিন্দনীয় ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। পাশাপাশি কর্ম বিরতির নাম করে তিন দিন ব্যাপী ক্লাস থেকে বঞ্চিত করেছেন অবুঝ শিক্ষার্থীদের।
তারা আরো জানান, অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ করে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিবাবকদের স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রও জমা দিয়েছেন। অবগত করেছেন স্থানীয় এমপি ইউএনও সহ অনেক উর্ধতম মহলকে। ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে, ৩০ জুলাই রাতে এলাকার ব্যক্তিগণ মিমাংসার লক্ষে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যানসহ উভয় পক্ষের সম্মতি ক্রমে শালিশ বৈঠকের মাধ্যমে নিশ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত নেন।
বৈঠকের তারিখ নির্ধারন করা হয় ৯ আগষ্ট সকাল ১০ ঘটিকায় (হাই স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গনে)। সেই লক্ষে অধ্যক্ষ চিঠির মাধ্যমে অভিবাবকদের বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার আহবান জানান। কিন্তু ৮ আগষ্ট রাতে মাইকিং শোনা যায় শালিশি বৈঠক নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না।তাই অভিবাবকদের উপস্থিত না হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
পরদিন সকাল ১০ টায় সরেজমিনে হাই স্কুল এন্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায় স্বল্প সংখ্যক অভিবাবক, শালিশিগণ, এলাকার মুরুব্বিয়ান, কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক মন্ডলীরা উপস্থিত হয়েছেন। নির্বাচিত অভিবাবক প্রতিনিধিদের উপস্থিত না থাকার কারন হিসাবে জানা যায়, শালিশিদের কথা ছিল কেবল স্থানীয় মুরুব্বিয়ান ও অভিবাবকদের সমন্নয়েই বৈঠক হবে।
কিন্তু, অধ্যক্ষ রফিক আলী কারো সাথে পরামর্শ না করেই ইউনিয়নের বাহিরের মুরুব্বিয়ানদের দাওয়াত করেছেন। যে কারনে এক পক্ষের অনুপস্থিতে বৈঠক কার্য না চালিয়ে অভিবাবক সমাবেশ আখ্যা দিয়ে সবা পরিচালনা করা হয়।
উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাওঃ তাজুল ইসলাম।
উল্লেখ যোগ্য উপস্থিতিদের মধ্যে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খাঁন, মুন্সি শফিকুর রহমান জামাল, বীর-মুক্তিযোদ্ধা এম এ মালেক মাষ্ঠার, আজিজুল হক, আঃ মালেক তালুকদার, রুবেল আহমেদ, হান্নান তালুকদার, মিজানুর রহমান মতিন, কমরেড মুজিবুর রহমান ফরিদ, উসমান গণি কাজল, সোয়েব চৌধুরী, আবুল কাশেম, সাংবাদিক নুরূল আমীন, ফারুক আল মূসা, সহ শতাধিক অভিবাবক।
সভায়, অভিবাবক প্রতিনিধি বাবুল মিয়া কর্তৃক শিক্ষকদের গালী দেওয়ার কথা অস্বীকার করে ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, উনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। হাশিম মেম্বার অহেতুক ঝগড়া লাগাতেই এমন মিথ্যা খবর দিয়েছেন।
চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খাঁন ও বেশ কয়েকজন অভিবাবকের চাপের মূখে ২৫৫ টাকার ফি এর পরিবর্তে ২০১১ সাল থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত কেন ৫০০ টাকা নেওয়া হয় ?
এই প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ রফিক আলী বলেন, ৫০০ টাকার নিচে ফি হলে তিনি সেন্টার চালাতে পারবেন না। সেন্টার টিকিয়ে রাখতে হলে ৫০০ টাকাই ফি দিতে হবে। এতে সম্মানী ও আনু প্রাসঙ্গিক খরচ দিয়ে এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা ফান্ডে ঘাটতি রয়েছে। অতিরিক্ত ফি ছাড়া অন্যান্য সেন্টারগুলো কিভাবে চলে অভিবাবকদের এ প্রশ্নের জবাব কারো কাছ থেকে পাওয়া যায় নি।
সবশেষে, অচিরেই উভয় পক্ষকে ডেকে সৃষ্ট জটিলতার মিমাংসা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এবং উপস্থিত সকলের মাঝে মিষ্টি, সিংগারা বিতরণ করা হয়।