হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জে একসময় নিয়মিত বিতর্ক চর্চা হত। জাতীয় পর্যায়ে শেষ্টত্ব অর্জনসহ টেলিভিশন বিতর্কে উপস্থিতিও ছিল নিয়মিত। ২৫ বছর পূর্বে গড়ে উঠেছিল বিতর্ক পরিষদ নামে একটি সংগঠন। সেই সংগঠকরা যখন চলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতে তখন আবার নেমে আসে স্থবিরতা। দীর্ঘদিন পর হবিগঞ্জে বসুন্ধরা-কালের কণ্ঠ জাতীয় স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের ফলে বিতর্কে নতুন প্রাণের স্পন্দ সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক সংগঠকরা সবাই চলে আসেন এই আয়োজনে। ফলে সেটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা না হয়ে পরিণত হয় বিতর্ক উৎসবে। কালেরকণ্ঠের এই আয়োজনকে সুচনা ধরে আসনে এগিয়ে যেতে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি এডভোকেট মো. আবু জাহির যখন ৫০ হাজার টাকা অনুদানের ঘোষনা দেন তখন সবাই স্বপ্ন দেখেন হবিগঞ্জে আবারও সুদিন ফিরবে বিতর্কে।
এর আগে কালেরকণ্ঠের পাঠক ফোরাম শুভ সংঘের আয়োজনে হবিগঞ্জে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বসুন্ধরা-কালের কণ্ঠ জাতীয় স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা। শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত হবিগঞ্জ বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এতে চ্যাম্পিয়ন হয় বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
হবিগঞ্জে এই বিতর্ককে ঘিরে এক সপ্তাহ যাবত ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক সপ্তাহ পূর্বে লটারীর মাধ্যমে প্রতিযোগিতার বিষয় এবং পক্ষ-বিপক্ষ নির্ধারণ করা হয়। প্রতিযোগিতার পূর্ব দিন মাধবপুরের আন্দিউড়া উম্মেতুননেছা উচ্চ বিদ্যালয় নাম প্রত্যাহার করলে সেখানে সুযোগ পায় সরকারি শিশু পরিবার বালক দল।
প্রতিযোগিতার প্রথম পর্বে শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষকের ভূমিকাই মুখ্য বিষয়ে অংশ নেয় বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং রিচি উচ্চ বিদ্যালয়। এতে জয়লাভ করে বিকেজিসি। ১ম পর্বে অপর পক্ষে গণমাধ্যম কি মানুষের কথা বলে বিষয়ে অংশ নেয় হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এতে জয়লাভ করে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
আরেকটি কক্ষে কৃষিকে হুমকির মুখে টেলে দিচ্ছে শিল্পায়ন বিষয়ে অংশ নেয় সরকারি শিশু পরিবার বনাম জেকে এন্ড এইচকে হাইস্কুল এন্ড কলেজ। এতে জেকে এন্ড এইচকে হাইস্কুল এন্ড কলেজ জয়লাভ করে। আরেকটি কক্ষে আগামী পৃথিবীর সংকট ক্ষুধার নয়, পরিবেশের বিষয়ে অংশ নেয় হবিগঞ্জ হাইস্কুল এন্ড কলেজ এবং এডভোকেট মোঃ আবু জাহির উচ্চ বিদ্যালয়। এতে এডভোকেট মোঃ আবু জাহির উচ্চ বিদ্যালয় জয়লাভ করে।
পরে প্রথম সেমিফাইনালে জিপিএ-৫ মেধা পরিমাপের একমাত্র মানদন্ড নয় বিষয়ে অংশ নেয় জেকে এন্ড এইচকে হাইস্কুল এন্ড কলেজ এবং এডভোকেট মোঃ আবু জাহির উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে জেকে এন্ড এইচকে হাইস্কুল জয়লাভ করে ফাইনালে উন্নীত হয়। অপর সেমিফাইনালে অংশ নেয় বিকেজেসি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। শুধু ভাল ফলাফল নয়, ভাল মানুষ হওয়াই জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত বিষয়ে উভয় পক্ষের তুমূল লড়াইয়ে জয়ী হয় বিকেজেসি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ফাইনালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে বিষয়ের পক্ষে ছিল বিকেজিসি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিপক্ষে ছিল জেকেএন্ডএইচকে হাই স্কুল এন্ড কলেজ। এতে বিজয়ী হয় বিকেজিসি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সেরা বক্তা হয় বিজয়ী দলের অধিনায়ক সামিয়া ইসলাম জেরিন।
প্রতিযোগিতা শেষে বিকেজিসি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অডিটরিয়ামে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। শুভ সংঘ হবিগঞ্জ শাখার সভাপতি রুমা মোদকের সভাপতিত্বে এবং কালেরকণ্ঠ জেলা প্রতিনিধি শাহ ফখরুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি এডভোকেট মো. আবু জাহির। বিশেষ অতিথি ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল, বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শুধাংশু কুমার কর্মকার, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য এবং হবিগঞ্জ বিতর্ক পরিষদের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট সুলতান মাহমুদ, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, ঘেলাঘর আসরে কেন্দ্রীয় সদস্য রোটারিয়ান বাদল রায়, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক সংগঠক মো. আমিরুল ইসলাম মাসুদ, হবিগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরীর প্রধান গ্রন্থাগারিক সাইফুল ইসলাম মিঠু, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারন সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, ইউনির্ভার্সিটি স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন এর প্রতিষ্টাতা সাধারন সম্পাদক শাহ সৈয়দুল হাসান সাঈদ এবং এডভোকেট মো. আবু জাহির উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যারা বিচারক ছিলেন প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এমপি আবু জাহির বলেন, যারা বিতর্ক চর্চা করে তারা যে পেশাতেই যাবে সেখানে ভাল কাজ করতে পারে এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কথা বলতে পারে। বিতর্ক চর্চাকে পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন। কালেরকণ্ঠের এই আয়োজনকে সূচনা হিসাবে মনে করে আগামী দিনে যাতে এর প্রসার ঘটে তার জন্য চেষ্টা করতে হবে। এর জন্য তিনি দায়িত্ব নিতে হবিগঞ্জ বিতর্ক পরিষদের জন্য ৫০ হাজার টাকার অনুদান ঘোষনা করেন।
পরে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে ক্রেস্ট, প্রতিযোগীদের সনদ এবং বসুন্ধরা খাতা বিতরণ করা হয়।